শেয়ারবাজারে স্টকের কেনাবেচা কিভাবে হয়? | How is trading in the stock market? | শেয়ার কিনে কি লাভ হতে পারে? | What can be gained by buying shares?

 


শেয়ার কিনে কি লাভ হতে পারে? What can be gained by buying shares? শেয়ারবাজারে স্টকের কেনাবেচা কিভাবে হয়? How is trading in the stock market?

স্টক মার্কেট আজ সম্পূর্ণরূপে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আজকের প্রযুক্তি-ভিত্তিক ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় উপগ্রহ-নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। এখানে, আসমুদ্রা হিমাচল থেকে বিশ্বের যেকোন প্রান্তের সমস্ত ক্রেতা এবং বিক্রেতারা সর্বোত্তম মূল্যে সম্পূর্ণ নির্ভুলতার সাথে ক্রয় এবং বিক্রয় করতে পারেন। অভিযোগের জায়গা নেই, তাই স্বচ্ছ। সিস্টেমটি সময়ের সাথে সাথে আরও সহজ, আরও সম্পূর্ণ এবং আরও ভাল হয়ে উঠছে৷ আজকের দিনে, আপনার কাছে একটি স্মার্টফোন এবং একটি ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই, আপনি ক্রমাগত বাজারগুলি দেখতে পারেন এবং ইচ্ছামত ট্রেড করতে পারেন। আপনার ব্রোকারেজ ফার্ম যেকোন সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত। যদি আপনি নিজে এটি কিনতে না পারেন, তাহলে আপনার এজেন্টকে কল করুন এবং তিনি এখনই এটি কিনে দেবেন। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক SEBI: শেয়ার বাজারে টাকা উড়ছে। যেখানে টাকার খেলা আছে, ভালোমন্দ মানুষ আছে। ভালো মানুষদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যখন কিছু খারাপ লোক তাদের নিজেদের লাভের জন্য অনেক ভাল লোককে সর্বশান্ত করার খেলা খেলে, তখন সেই ধ্বংস বড় নির্মম হয়ে ওঠে। হর্ষদ মেহতা, কেতন পারেখ এবং অন্যান্যরা বারবার নানা  ধরণের কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বাজারকে বিপর্যস্ত করে। আর সেই সুনামিতে ভেসে গেছে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী। তাই, এই বিভিন্ন অনিয়ম এবং কেলেঙ্কারী প্রতিরোধ করার জন্য, ভারত সরকার 1992 সালে The Securities and Exchange Board of India (SEBI) প্রতিষ্ঠা করে। SEBI হল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যা সমস্ত ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক মার্কেট, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদিকে রক্ষা করে। এই সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান কঠোরভাবে SEBI দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সময়ে সময়ে SEBI বিভিন্ন নিয়ম জারি করে। সেবি খুবই শক্তিশালী। যে কেউ SEBI নিয়ম লঙ্ঘন করে তাকে শাস্তি দেওয়ার সমস্ত অধিকার এবং ক্ষমতা SEBI-এর রয়েছে। তাই আপনার মত ভালো মানুষ আত্মবিশ্বাসের সাথে অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন এই SEBI-র জন্য।

উপার্জন দিয়ে পরিবার ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর পর, লোকেরা অবশিষ্ট অর্থ আরও বাড়ানোর জন্য ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস ইত্যাদিতে জমা করে। কখনও এলআইসি বা বিভিন্ন বীমা ভবিষ্যতের মোকাবিলা করার জন্য এবং পারিবারিক নিরাপত্তার জন্য। এই উদ্বৃত্ত অর্থ এক জায়গায় নয়, বিভিন্ন সঞ্চয় এবং সুরক্ষা ক্ষেত্রে রাখা দরকার। কারণ সব ক্ষেত্রে একই প্রতিদান পাওয়া যায় না। এটি লক্ষ্য করা গেছে যে উচ্চ-ঝুঁকির পরিস্থিতিতে রিটার্ন খুব বেশি হতে পারে, যখন কম-ঝুঁকির পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত রিটার্ন অনেক কম। মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ার বাজার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র। অতএব, এই এলাকায় রিটার্ন অসীম হতে পারে বা নাও হতে পারে। বিশেষ করে শেয়ারবাজার। সঠিক শিক্ষা এবং সঠিক স্টক নির্বাচনের সাথে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করলে এই বিনিয়োগটি আপনাকে অল্প সময়ের মধ্যেই কোটিপতি করে তুলতে পারে। এটি মোটেও স্বপ্ন নয়। এটা অনেকের সাথেই ঘটেছে এবং ঘটছে। আর কিছু না করে, আসুন দেখি আমরা স্টক কিনে কি পেতে পারি। শেয়ারবাজারে হাজার হাজার কোম্পানি নিবন্ধিত। কিন্তু তাদের সবাই ভালো ব্যবসা করতে পারে না। একটি কোম্পানিতে স্টক কেনা মানে সেই ব্যবসার একটি অংশ এর মালিক হওয়া। সুতরাং একটি খারাপ কোম্পানিতে স্টক কেনা মানে আমরা একটি খারাপ ব্যবসার মালিক। ফলস্বরূপ, মূল্য আমার ক্রয় মূল্যের আরও নিচে নেমে যাবে এবং আমার বিনিয়োগকৃত মূলধন সেই হারে হ্রাস পাবে। তাই ভালোভাবে শেখার পর আমাদের প্রথম কাজ হলো ভালো পারফর্ম করে এমন কোম্পানিগুলোর স্টক বেছে নেওয়া। এটি অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে কোম্পানির ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক ফলাফল থেকে নির্ধারণ করা যেতে পারে। আমরা জানি যে স্টক ভালো হোক বা খারাপ হোক, শেয়ার বাজারের ওঠানামার সাথে শেয়ারের দাম ওঠানামা করবে। যখন বিভিন্ন কারণে বাজার পতন হয়, তখন স্মার্ট, শিক্ষিত এবং সুবিধাবাদী বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক কম দামে ভালো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে। আপনি যদি অনেক বছর ধরে স্টক রাখেন, তাহলে আপনি এই স্টকগুলি থেকে পেতে পারেন-

(1) ডিভিডেণ্ড (Dividend): Dividend-এর বাংলা মানে হল লভ্যাংশ। যদি কোম্পানি লাভ করে, তাহলে কোম্পানি লাভের একটি আনুপাতিক অংশ শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করবে। মূলত শেয়ারের ফেস ভ্যালুর (Face Value) শতাংশ হারে এই ডিভিডেণ্ড দেওয়া হয়। আপনি বুঝতে পারেন যে কোম্পানির ব্যবসা যদি লাভজনক না হয়, তাহলে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। যদিও কোনো কোনো খারাপ কোম্পানি তাদের খারাপ ব্যবসার কথা চাপা দেওয়ার জন্য, লগ্নীকারীদের ভোলানোর জন্য ডিভিডেণ্ড দেয়। তাই সাবধান থাকা উচিত। তবে ভালো কোম্পানিগুলোও বছরে কয়েকবার ডিভিডেণ্ড অফার করে। শুধু তাই নয়, হঠাৎ অতিরিক্ত মুনাফা হলে একই মরসুমে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশও জারি করতে পারে। একে ‘ইন্টেরিম ডিভিডেণ্ড’ (Interim Dividend) বলা হয়।

(2) বোনাস শেয়ার কখনো কখনো কোম্পানি শেয়ারের ফেস ভ্যালু (Face Value) অপরিবর্তিত রেখে শেয়ার হোল্ডারদের বর্তমান শেয়ারের আনুপাতিকহারে অতিরিক্ত শেয়ার দেয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তখন আনুপাতিক হরে শেয়ারের দামেও হ্রাস হয়। মনে করুন, আপনার কাছে একটি কোম্পানীর 100 শেয়ার আছে যার ফেস ভ্যাল্যু (Face Value) 10 টাকা এবং প্রতিটির দাম 100 টাকা করে। কোম্পানী 1:1 হারে বোনাস ঘোষণা করল 01.10.2022 তারিখে এবং যার ‘রেকর্ড ডেট’ ঘোষণা করল 15.10.2022 (Record Date হল সেইদিন, যেদিন যত সংখ্যক শেয়ার আপনার Account-এ থাকবে তার উপরেই আপনি Bonus পাবেন)। তাহলে 16.10.2022 থেকে আপনার ঐ শেয়ার Ex-Bonus হয়ে যাবে। এখন আপনার Account-এ ঐ কোম্পানির 10 টাকা ফেস ভ্যাল্যু মূল্যের মোট 200টি শেয়ার হয়ে যাবে এবং প্রতিটি শেয়ারের দাম 50 টাকা হয়ে যাবে। এতে করে আপনার মোট শেয়ার মূল্য একই থাকলেও, অপরিবর্তিত Face Value মূল্যের অতিরিক্ত 100 শেয়ার আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়ে গেলেন। এরপর যখন Dividend দেবে আপনি আগের থেকে ডাবল টাকা Dividend পাবেন। আর ভালো কোম্পানীর শেয়ারের দাম এমনিতেই অনেকটা বাড়ে। ফলে আপাতত Bonus পেয়ে লাভ হলনা মনে হলেও কিছুদিনের মধ্যেই শেয়ার দর বাড়লে টের পাওয়া যায় আপনার লগ্নী কি হারে বাড়ছে।

(3) শেয়ার স্পিলিট (Stock Split): এক্ষেত্রেও শেয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় কিন্তু শেয়ারমূল্য সেই হারে কমে যায়। ফলে আপনার হাতের শেয়ার সংখ্যায় বাড়লেও সেইমুহূর্তে মোট শেয়ার মূল্য অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, আপনার সেই কোম্পানীর যার 10 টাকা Face Value মূল্যের মোট 200 টা শেয়ার আছে। সেই কোম্পানী যদি 15.10.2022 ‘রেকর্ড ডেট’ স্থির করে প্রতিটি শেয়ারের Face Value.1 টাকায় ভাঙ্গে বা Split করে। তাহলে 16.10.2022 তারিখে আপনার Account-1 টাকা Face Value মূল্যের মোট 200x10 = 2000 টা শেয়ার হয়ে যাবে। আর আপনার এক একটা শেয়ার যদি Split-এর আগে 200 টাকা করে হয়। সেক্ষেত্রে Split হওয়ার পর এক একটা শেয়ারের দাম 200 + 10 = 20 টাকা করে হবে। এক্ষেত্রেও ভালো কোম্পানীর শেয়ার পরে আরও দাম বাড়লে আপনার লগ্নী প্রচুর রিটার্ন দেবে। আমরা পরে আলোচনা করবো, ঠিক এই প্রক্রিয়ায় Wipro, Infosys, ITC, Marico প্রভৃতি শেয়ার কোটি কোটি টাকা মনাফা দিয়েছে ও দিচ্ছে।

(4) রাইট শেয়ার (Rights Issue): কখনো কখনো কোম্পানী বর্তমান শেয়ার হোল্ডারদের (Existing Share Holders) তাদের শেয়ার সংখ্যার আনুপাতিকহারে আরোও শেয়ার কেনার অনুমতি দেয় অপেক্ষাকৃত কমদামে ৷ ভালো কোম্পানীর এমন অফার সাধারণত কেউই হাতছাড়া করেন না। এভাবেও আপনার Account-এ লাভ জনক শেয়ার সংখ্যা বাড়তে পারে। সুতরাং বুঝতে হবে যে আপনি যদি আপনার টাকা একটি ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে দীর্ঘ সময়ের জন্য জমা করেন তবে আপনার মূলধন একই থাকবে এবং শুধুমাত্র সুদের অংশ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আপনি যদি একটি ভাল কোম্পানির স্টকে বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনি বছরে কয়েকবার ডিভিডেণ্ড তো পাবেন উপরোন্ত Splits, Bonus ইত্যাদি করে আপনার হাতের শেয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। সময়ের সাথে সাথে আপনার শেয়ারের বাজারদরও বাড়বে। এইভাবে, স্টকে যে রিটার্ন সম্ভব যা অন্য বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্ভব হবে না।

Comments